বাড়ি ভাড়া আইন অনুযায়ী এলাকার ভিত্তিতে মানসম্মত বাড়িভাড়া নির্ধারণ হওয়ার কথা। এতে প্রতি বছর বাড়িভাড়া কত টাকা বাড়ানো যাবে, বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়াদের কি কি সুযোগসুবিধা দিবে তা নিয়েও আছে নির্দেশনা। কিন্তু এ নিয়ে একটি আইন থাকলেও তার কোনো বাস্তবায়ন নেই।
বাড়ি ভাড়া আইন অনুযায়ী এসবের দায়িত্বে থাকবেন একজন ‘বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রক’। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে এমন কোন নিয়োগের কথা শোনা যায়নি। কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় প্রতি বছরের শুরুতে ইচ্ছেমতো বাড়ানো হয় বাড়িভাড়া। এ নিয়ে বাসা মালিক ও ভাড়াটিয়াদের মধ্যে দিন দিন সংকট বাড়ছে।
জানা যায় যে, ভাড়াটিয়াদের স্বার্থ রক্ষায় ১৯৯১ সালে বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন করে বাংলাদেশ সরকার। তবে সেই আইন কোন মন্ত্রণালয় বা কোন সংস্থা দেখভাল করবে সে বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। উক্ত আইনে সরকার থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে প্রতিটি এলাকায় ‘নিয়ন্ত্রক’ নিয়োগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, যিনি ভাড়াটিয়া কিংবা বাড়িওয়ালাদের অভিযোগ শুনানির মাধ্যমে তা নিষ্পত্তি করবেন।
তবে বিগত ৩৪ বছরেও আইন অনুযায়ী কোথাও ‘বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রক’ নিয়োগ দেওয়ার কথা শোনা যায়নি। ফলে বাড়িওয়ালারা নিজেদের ইচ্ছামতো বাড়ি ভাড়া বাড়ান।
বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৯১-এ বলা রয়েছে, কোনো বাড়ির ভাড়া ‘মানসম্মত ভাড়া’র অধিক বৃদ্ধি করা হলে ঐ অধিক ভাড়া, ভাড়ার চুক্তিতে ভিন্নরকম কিছু থাকলেও আদায়যোগ্য হবে না। তবে ‘মানসম্মত ভাড়া’ বলতে কত টাকা তার সংগা নেই আইনে।
দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির দামসহ জীবনযাত্রার খরচ মেটাতে এমনিতেই হিমশিম খাচ্ছেন সাধারন মানুষ। এর মধ্যে রাজধানীর অধিকাংশ এলাকায় বাসাভাড়া বাড়ানো হচ্ছে নতুন করে। বছরের শুরুতেই এলাকাভেদে বাসাভাড়া বেড়েছে ৫০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত! কোথাও কোথাও ফ্ল্যাটের আকার ভেদে ভাড়া বেড়েছে ৫ হাজার টাকাও। যারা ভাড়া বাসায় থাকেন, তাদের আয়ের একটা বিশাল অংশ চলে যায় মাস শেষে বাসাভাড়ায়।
২৭ জুলাই ২০২২ সালে প্রকাশিত জনশুমারি অনুযায়ী ঢাকার জনসংখ্যা ১ কোটি ২ লাখ ৭৮ হাজার ৭০৮ জন। তার মধ্যে উত্তর সিটি করপোরেশনের জনসংখ্যা ৫৯ লাখ ৭৯ হাজার ৫৩৭ জন, যা অন্য ১২টি সিটি করপোরেশনের মধ্যে সর্বোচ্চ। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার জনসংখ্যা ৪২ লাখ ৯৯ হাজার ৩৪৫ জন। যদিও সংখ্যাটা বাস্তবে আরো বেশি। প্রতিবছর জানুয়ারি মাস এলেই ভাড়া বাড়িয়ে নতুন ভাড়ার চার্ট ধরিয়ে দেন বাড়ির মালিকরা।
রাজধানীর বৃহৎ জনগোষ্ঠী ভাড়াটিয়া হলেও তাদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে মাথাব্যথা নেই নীতিনির্ধারণীদের। কাগজে-কলমে আইন থাকলেও তার সুফল কোনো ভাড়াটিয়া নিতে পেরেছেন, এমন নজির বিরল। কারণ বাড়ি ভাড়া বিষয়ক আইনটি এখন অস্পষ্ট। আর বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন কোন সংস্থা বাস্তবায়ন করবে, তারও সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। যেহেতু সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই কোন এলাকায় কত শতাংশ বাড়িভাড়া বাড়বে তাও বলা নেই তাই মালিকদের খেয়ালখুশিতে ফি বছর বাড়িভাড়া বাড়ে।
ভাড়াটিয়া পরিষদের সভাপতি বাহারানে সুলতান লয়ারহিন্টস কে বলেন, আমরা এ আইন বাস্তবায়নের জন্য বহুবার দাবি জানিয়েছি। কিন্তু এটি এখনো বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি। বাড়িভাড়া সংক্রান্ত কোনো সমস্যা কোথায় কার কাছে বলব, এই সুযোগ নেই। এ বিষয়ে কোনো দিকনির্দেশনাও নেই।
বাড়িভাড়া বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) সভাপতি আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, “ঢাকার প্রায় ৮০ শতাংশই ভাড়াটিয়া। বিভিন্ন সময় নানা জরিপে সেটাই উঠে এসেছে। তিনি আরো বলেন, ভাড়াটিয়াদের জন্য একটি আইন রয়েছে। তবে সেই আইন কোন সংস্থা বা কোন মন্ত্রণালয় দেখভাল করবে তার সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা নেই। তাই আইনটি যুগোপযোগী করা দরকার।
Discussion about this post