ভিকটিম কম্পেন্সেশন অ্যাক্ট- ভিকটিম কমপেনসেশন এক্ট ২০০৭ , এই আইনটার নাম বেশিরভাগ মানুষ শোনেন নাই। শোনার কথাও না, কারন এই আইনটা পাশের অপেক্ষায় ঝুলে আছে গত ১৭ বছর হল! ২০০৭ সালে এর খসড়া করে ফেলে রাখা হলেও আইনটি পাশের কোন অগ্রগতি নেই। এই আইনটা কেন জরুরি যদি একটু বুঝতে পারেন তাহলে আপনিও চাইবেন খুব দ্রুত যেন “ভিকটিম কমপেনসেশন এক্ট” পাশ হয়।
ভিকটিম কম্পেন্সেশন অ্যাক্ট
রুপা খাতুন রেপ কেসের কথা মনে আছে?
তারিখটা ২৫ আগস্ট ২০১৭। অনেক বেকার যুবক যুবতীর স্বপ্নের শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা ছিল সেদিন। রুপা খাতুন সেই স্বপ্ন পূরনের উদ্দেশ্যে রংপুরে পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে সন্ধ্যায় বাসে উঠে তার কর্মস্থল ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে ছোঁয়া পরিবহনের একটি বাসে উঠে। সাথে ছিল তার তার কলেজ বন্ধু বারেক। কিন্তু বারেক এলেংগা বাস স্ট্যান্ডে নেমে যায় প্রায় রাত ৯ টার দিকে।
এক পর্যায়ে সব যাত্রী নেমে যায়, বাকি থাকে শুধু রুপা খাতুন। বাসের হেলপার শামীম পেছনের সিটে নিয়ে যেয়ে রুপা খাতুন কে ধর্ষন করে। এর পর অন্য দুইজন হেলপার আকরাম এবং জাহাঙ্গীরও পর্যাক্রমে রূপাকে ধর্ষণ করে। এসময় ড্রাইভার হাবিব গাড়ি চালাচ্ছিলো এবং সুপারভাইজার গেন্ডু ঘুমচ্ছিল। একসময় টাংগাইলের নির্জন জায়গায় তাকে ফেলে দেয়। ফেলে দেয়ার আগে রুপার ঘাড় ভেংগে দেয়া পিচাশেরা।
ভিকটিম কম্পেন্সেশন অ্যাক্ট
এই গল্প টা বলার কারন হল ৫ জন আসামীর মধ্যে ৪ জন্য কে মৃত্যুদন্ড ও ১ জন কে সাত বছরের কারাদণ্ড ও ১ লক্ষ টাকা জরিমানা করে আদালত। এবন ৭ দিনের মধ্যে ছোঁয়া পরিবহনের বাসটি রুপার পরিবারকে হস্থান্তরের নির্দেশ দেয় আদালত।
ভিকটিম কমপেনসেশন এক্ট
সিভিল মামলায় জরিমানা করা হলে সেই টাকা বাদী পায় বা বাদীকে প্রতিকার হিসেবে বিবাদীর নিকট হতে ক্ষতিপূরণ আদায় করে দেয়া হয়। কিন্তু ক্রিমিনাল মামলায় এ ধরনের নজির বিরল। রুপা খাতুনের রেপ কেসটাই বাংলাদেশে একমাত্র নজির যেখানে জরিমানা হিসেবে ছোঁয়া পরিবহনের বাসটি ৭ দিনের মধ্যে রুপা খাতুনের পরিবার কে হস্তান্তর এর নির্দেশ দেয় আদালত।
রুপা খাতুন রেপ কেসের রায় টাই জরিমানাকে ভিক্টিম কমপেনসেশন হিসেবে দেয়ার একমাত্র নজির। আরো দুই একটা কেসে হয়ত এটা করা হয়েছে কিন্তু বাস্তয়ন সম্ভব হয় নি। কারন আসামী উচ্চ আদালত থেকে খালাস পেয়ে গিয়েছে। আর খালাস পেলে আসামীকে কমপেনসেশন দেয়াতে বাধ্য করার কোন উপায় থাকে না।
এখানেই প্রয়োজন হয় “ভিক্টিম কমপেনসেশন” আইনের। যার মাধ্যমে বাধ্যতামূলক ভাবে ক্রিমিনাল মামলায় কমপেনসেশন টা ভিক্টিম অথবা তার পরিবার পায়। কারন ভিক্টিম ক্ষতিপূরণ আদালতের ইচ্ছাধীন ক্ষমতা, এটা বাধ্যতামূলক নয়।
এদিক দিয়ে ইন্ডিয়ার আইন এগিয়ে রয়েছে। তারা ভিক্টিমদের কথা মাথায় রেখে ইন্ডিয়ান কোড অফ ক্রিমিনাল প্রসিডিওর এর, ১৫৭A ধারা অনুযায়ী ভিক্টিম কে ক্ষতিপূরণ দেয়ার একটা রাস্তা তৈরি করেছে।
Legal characteristics of a company
রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকার মিলে একটা স্কিম তৈরি করবে যেখান থেকে ভিক্টিম আবেদন করে আর্থিক সাহায্য পাবে। বাংলাদেশের আইনে এধরনের কোন বিধান রাখা হয় নাই।
ভিক্টিম ক্ষতিপূরণ আইন পাশ হওয়া খুবই জরুরি। প্রতিবেশী ভারত ভিক্টিম কমপেনসেশন স্কিম চালু করে যেমন প্রশংসা পেয়েছে আমাদের আইন প্রণেতাদের উচিত সাধারন মানুষের কথা মাথায় রেখে দ্রুত Victim Compensation Act 2007 -এই আইনটাকে বাস্তবে রূপ দেয়া।
Discussion about this post