স্ত্রীর সম্পত্তি বন্টন
রিমা চৌধুরী ধন্যাঢ্য বাবার একমাত্র কন্যা সন্তান। তার কোন ভাই বোন নেই। তৌহিদের সাথে তার বিয়ে হয়। এবং তাদের দুইটা সন্তান হয় একটা ছেলে একটা মেয়ে। তাদের সংসার খুব সুখেই যাচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে বাধ সাধে রিমা চৌধুরীর অসুখ। ঘনঘন সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। একটা সময় না পেরে ভাল ডাক্তারের কাছে চিকিৎসার জন্য যায়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ডাক্তার জানাই রিমার ক্যান্সার ধরা পড়েছে। এবং লাস্ট স্টেজে আছে স্যার বাধবে মাত্র এক মাস।
হল তাই ও দুই সন্তান রেখে রিমা চৌধুরী পারি জমালেন পরপারে।
রিমা চৌধুরীর বাবা একজন গার্মেন্টস মালিক। ঢাকায় তার তিনটা নামকরা গার্মেন্টস রয়েছে। সেই সাথে রয়েছে প্রচুর ধনসম্পত্তি জমি জমা। এভাবে চলতে চলতে হঠাৎ করেই তৌহিদের শশুর অর্থাৎ রিমার বাবা মারা যান। রিমার বাবার কোনো পুত্র সন্তান নেই রিমা একমাত্র কন্যা সন্তান ছিল তিনিও মারা গিয়েছেন। এখন বিষয় হলো তার যে ধনসম্পত্তি রয়েছে সেগুলো কিভাবে ভাগ বন্টন হবে? স্ত্রীর সম্পত্তিতে স্বামীর অধিকার রয়েছে কিনা অর্থাৎ তৌহিদুর রহমান তার স্ত্রী রিমা চৌধুরীর পিতার রেখে যাওয়ার সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারী হবে কিনা সেটা সম্পর্কে জানতে চান।
স্ত্রীর সম্পত্তিতে স্বামীর অধিকার রয়েছে। অর্থাৎ স্ত্রী যদি সম্পত্তি রেখে মারা যায় এই সম্পত্তির একটা অংশ স্বামী পায়। যদি সন্তান-সন্ততি থেকে থাকে সে ক্ষেত্রে ৮ ভাগের এক ভাগ স্বামী পাবে এবং সন্তান-সন্ততি না থাকলে চারভাগের এক ভাগ পাবে। ইসলামী শরীয়া মোতাবেক এভাবেই স্ত্রীর সম্পত্তি ভাগ বন্টন হয়।
পিতা মারা গেলে মাতা অন্যত্র বিয়ে করলে সম্পত্তি পাবে কি?
এখন প্রশ্ন হল বাবার আগে মেয়ে মারা গিয়েছে তাহলে সম্পত্তি মেয়ের স্বামী বা ছেলে মেয়ে পাবে কিনা?
ইসলামী শরীয়া মোতাবেক এ ধরনের ভাগ বন্টনের কোন ব্যবস্থা না থাকলেও বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী এ ধরনের সম্পত্তির একটা অংশ উত্তরাধিকারী হিসেবে পাওয়া যায়।
‘মুসলিম পারিবারিক আইন ১৯৬১ আইনের ৪ ধারায় বলা হয়েছে—
‘যার সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে বণ্টিত হবে, তার পূর্বে তার কোনো পুত্র বা কন্যা মারা গেলে এবং উক্ত ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার সম্পত্তি বণ্টনের সময় উক্ত পুত্র বা কন্যার কোনো সন্তানাদি থাকলে, তারা প্রতিনিধিত্বের হারে সম্পত্তির ওই অংশ পাবে, যা তাদের পিতা অথবা মাতা জীবিত থাকলে পেত।’
এই আইন থেকে আমরা স্পষ্ট বুঝতে পারি রিমা চৌধুরীর ছেলে মেয়ে, রিমা চৌধুরী তার পিতার কাছ থেকে যে পরিমাণ অংশ পাওয়ার কথা ছিল ঠিক সেই পরিমাণ অংশ পাবে কিন্তু রিমা চৌধুরীর হাজব্যান্ড তৌহিদুর রহমান কোন অংশের উত্তরাধিকারী হবে না।
তবে রিমা চৌধুরী মারা যাওয়ার সময় তার নামে যদি কোন সম্পত্তি থেকে থাকে সেই সম্পত্তি থেকে তার অংশ অনুযায়ী জমি বা সম্পত্তি পাবেন।
তাই আমরা বলতে পারি পিতার আগে কন্যা মারা গেলে নাতি নাতনি সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয় কিন্তু শ্বশুরের সম্পত্তিতে জামাইয়ের কোন অংশ নেই।
Discussion about this post