খতিয়ানে ভুল হলে তিনটি উপায়ে খতিয়ান সংশোধন করা যাবে। রেকর্ড সংশোধনের ৩টি উপায় জানা থাকলে খতিয়ানের যেকোনো ভুল সংশোধন করতে পারবেন। খতিয়ান সংশোধন করার ৩ টি উপায় খুব সহজেই জেনে নিন।

আসল মালিক এবং দখলদার হওয়ার পরেও যদি খতিয়ানে আপানার মালিকীয় এবং দখলীয় জমির মালিকানা অন্যের নামে রেকোর্ড হয় অথবা খতিয়ানে করণিক ভুল থাকে তখন আপনি কিভাবে রেকর্ড সংশোধন করবেন?

১। The State Acquisition and Tenancy Act, 1950 এর ৪৩ ধারা অনুযায়ী, এবং প্রজাস্বত্ব বিধিমালা, ১৯৫৫ এর বিধি ২৩ এর সাবসেকশন (৩) মতে চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত রেকর্ডের করনিক ভুল (Clerical Mistake) সংশ্লিষ্ট রাজস্ব কর্মকর্তা যিনি বর্তমানে সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা এসি ল্যান্ড হিসেবে কাজ করেন তিনিই রেকর্ড  সংশোধন করতে পারেন।

 সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবেদনের প্রেক্ষিতে বা প্রজাস্বত্ব বিধিমালা ১৯৫৫ এর ২২ বিধির সাব সেকশন (১) অনুযায়ী খতিয়ানের কোন করণিক ভুল সংশোধনের জন্য প্রতিবেদন প্রাপ্তির পর পূর্ববর্তী জরিপের কাগজপত্র, প্রাথমিক খাজনা বিবরণী, কালেক্টরের দপ্তরে সংরক্ষিত খতিয়ানের কপি এবং ২ নং রেজিস্ট্রার পর্যালোচনা করে এবং তিনি যে ধরনের অনুসন্ধান প্রয়োজন মনে করেন, তা করে এরূপ করণিক ভুল সংশোধনের নির্দেশনা দেবেন। কালেক্টর বা ইউনিয়ন (ভূমি) সহকারী কর্মকর্তা কর্তৃক সংরক্ষিত খতিয়ান এবং ২ নম্বর রেজিস্ট্রার অনুযায়ী সংশোধন করার নির্দেশ প্রদান করত সংশোধনলিপির কপি সংশ্লিষ্ট পক্ষকে প্রদান করবেন।

এসি ল্যান্ড কর্তৃক বিবেচনাযোগ্য করণিক ভুলের মধ্যে নামের ভুল, হিস্যা অনুযায়ী অংশ বসানোর হিসেবে ভুল, দাগসুচিতে ভুল, ম্যাপের সংঙ্গে রেকর্ডের অমিল, জরিপকালে বাবার মৃত্যুর কারণে সন্তানদের নামে সম্পত্তি রেকর্ড হবার কথা থাকলেও জরিপকারকদের ভুল বা অজ্ঞাত কারণে তা মূল প্রজা বা বাবার নামেই আবার রেকর্ড হওয়া ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

এসব ক্ষেত্রে ইউনিয়ন ভূমি অফিসে থেকে প্রতিবেদন পাঠানোর পর যার নামে খতিয়ানে ভুল নাম এসেছে অথবা সংশ্লিষ্ট পক্ষকে নোটিশ প্রদান করা হয়। তারপর একটি নির্ধারিত তারিখে উভয়পক্ষের শুনানি গ্রহণ ও দাখলীয় কাগজপত্রাদি বিবেচনা করে কোনো আপত্তি না থাকলে খতিয়ানের করণিক ভুল সংশোধনের আদেশ দেওয়া হয়।

সংশোধিত আদেশ অনুসারে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা সংশোধিত খতিয়ান প্রস্তুত করে পেশ করেন এবং আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় রেকর্ড সংশোধন করেন।

রেকর্ড সংশোধনের পুরো পক্রিয়া সম্পন্ন হতে সাধারণত সময় লাগে প্রায় ৩০-৩৫ দিন। সরকারি ভাবে খতিয়ান সংশোধনের জন্য আবেদনের সাথে ২০/- টাকার কোর্ট ফি দিতে হয়।

খতিয়ান সংশোধনের আবেদনের সাথে যেসব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জাম দিতে হবে:

১। সর্বশেষ নামজারি খতিয়ান, CS, RS, SA, BS  খতিয়ানের সত্যায়িত ফটোকপি/ সার্টিফাইড কপি।

২। সংশ্লিষ্ট মৌজার CS ও BS মৌজা ম্যাপ

৩। ওয়ারিশন সনদ। (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)(৩ মাসের মধ্যে ইস্যুকৃত)

৪। মূল দলিলের ফটোকপি অথবা সার্টিফাইড কপি ( প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।

৫। সর্বশেষ জরিপের পর থেকে ভায়া বা পিট দলিল (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।

৬। ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের দাখিলা।

৭। আদালতের রায়/আদেশ/ডিক্রির সার্টিফাইড কপি বা জাবেদা নকল।

৮। আদালতের রায়/আদেশ/ডিক্রি থাকলে আরজির সার্টিফাইড কপি বা জাবেদা নকল।

৯। বিএস জরিপের মাঠপর্চা, DP খতিয়ান ইত্যাদি

একইভাবে প্রতারণামূলক লিখনের (Fraudulent Entry) মাধ্যমে সৃষ্ট চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত রেকর্ড সংশোধনের জন্য প্রাপ্ত আবেদন অথবা প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজস্ব কর্মকর্তা প্রজাস্বত্ব বিধিমালা, ১৯৫৫ এর বিধি ২৩ এর সাবসেকশন (৪) অনুযায়ী রেকর্ড সংশোধনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

খতিয়ান সংশোধন সরকারি ফি ১১৫০ টাকা জমা দিয়ে DCR এবং সংশোধিত খতিয়ানের কপি উপজেলা/সার্কেল ভূমি অফিস থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন।

২। The State Acquisition and Tenancy Act, 1950 এর ১৪৯ ধারার (৪) উপধারা মতে, Board of Land Administration যে কোনো সময় যে কোনো খতিয়ানে বা চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত সেটেলমেন্ট রেন্ট-রোলে অন্তর্ভুক্ত যথার্থ ভুল (Bonafide Mistake) সংশোধনের আদেশ দিতে পারেন। কিন্তু Board of Land Administration বর্তমানে বিলুপ্ত বিধায় এ ক্ষমতা সরকারের পাশাপাশি ভূমি আপিল বোর্ডের রয়েছে।

৩। ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল সর্বশেষ জরিপে প্রকাশিত খতিয়ানের বিষয়ে যে কোনো আদেশ প্রদান করতে পারেন। জরিপ পরবর্তী স্বত্বলিপি গেজেটে চূড়ান্ত প্রকাশনার পর কোন সংশোধনীর দাবি থাকলে তা ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল, ল্যান্ড সার্ভে আপিল ট্রাইব্যুনাল এবং সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের মাধ্যে সমাধান করতে হয়।

অর্থাৎ আপনার রেকর্ড / খতিয়ানে যে কোনো ধরনের ভুল হোক না কেন ভুলের ধরণ অনুসারে উপরিউক্ত তিনটি উপায়ে তা সংশোধন করা যাবে।