গ্রাম আদালতের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে গত ৫ মার্চ ২০২৪ তারিখে গ্রাম আদালত আইন সংশোধন করে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। এই আইনটি এখন গ্রাম “আদালত (সংশোধন) আইন, ২০২৪” বলে অভিহিত করা হবে।

পল্লী এলাকার স্থানীয় জনগণের ছোটখাটো বিরোধের দ্রুত ও সহজ নিষ্পত্তি সুবিধা নিশ্চিত করতে গ্রাম আদালত অধ্যাদেশ, ১৯৭৬ প্রণীত হয়। পরবর্তীতে উক্ত অধ্যাদেশ রহিতপূর্বক সম্পূর্ণ নতুনভাবে গ্রাম আদালত আইন, ২০০৬ প্রণয়ন করা হয়েছে এবং ২০১৩ সালে আইনের কতিপয় ধারা সংশোধন করা হয়েছে।

সরকার প্রাতিষ্ঠানিক বিচার ব্যবস্থার উপর চাপ হ্রাস করতে এবং দরিদ্র ও অসহায় জনগণের ন্যায় বিচার সহজলভ্য ও দ্রুত নিশ্চিত করার জন্য ছোটখাটো বিরোধের ক্ষেত্রে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির ধারণা ও প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে কাজে করে যাচ্ছে। বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির ধারণার উপর প্রতিষ্ঠিত গ্রাম আদালত একটি আধা-আনুষ্ঠানিক বিরোধ নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গ্রামের জনসাধারণ, বিশেষ করে নারী, দরিদ্র ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠী, ছোটখাটো বিরোধ স্থানীয় পর্যায়ে গ্রাম আদালতের মাধ্যমে দ্রুত ও স্বল্প ব্যয়ে মীমাংসা করার সুযোগ পাচ্ছেন।

গ্রাম আদালত আইন, ২০০৬ এর সফল বাস্তবায়নকালে মাঠ পর্যায়ে কিছু সীমাবদ্ধতা অনুভূত হয়েছে, যা ন্যায় বিচার প্রাপ্তির অভিগম্যতা সৃষ্টির চলমান প্রয়াসের পূর্ণ সফলতা লাভের অন্তরায়। তৎপ্রেক্ষিতে বলবৎ গ্রাম আদালত আইন, ২০০৬ এর ৮টি ধারা সংশোধন ও নতুন ২টি ধারা সংযোজন এবং তফসিলে সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়েছে।

এমতাবস্থায়, প্রস্তাবিত সংশোধনীসমূহের প্রাসঙ্গিকতা পর্যালোচনা করে সংশোধন ও পরিমার্জনক্রমে গ্রাম আদালত (সংশোধন) আইন, ২০২৪ প্রণয়ন করার জন্য গত ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ মন্ত্রীসভা কর্তৃক নীতিগত ও চূড়ান্তভাবে অনুমোদন লাভ করেছে।

উক্ত সংশোধিত আইনের ২ ধারায় শিশু, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কে সংগায়িত করা হয়েছে। ৩ ধারায় নাবালকের পরিবর্তে ‘শিশুর’ ব্যাবহার করা হয়েছে।

৫ ধারার ১ উপধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে গ্রাম আদালতের গঠনে পরিবর্তন আনা হয়েছে।

৪। ২০০৬ সনের ১৯ নং আইনের ধারা ৫ এর সংশোধন। উক্ত আইনের ধারা ৫ এর-

(ক) উপ-ধারা (১) এর পরিবর্তে নিম্নরূপ উপ-ধারা (১) প্রতিস্থাপিত হইবে, যথা:-

(১) উপ-ধারা (৫)এর বিধান সাপেক্ষে, একজন চেয়ারম্যান এবং উভয়পক্ষ কর্তৃক মনোনীত দুইজন করিয়া মোট পাঁচজন সদস্য লইয়া গ্রাম আদালত গঠিত হইবে।

তবে শর্ত থাকে যে, প্রত্যেক পক্ষ কর্তৃক মনোনীত দুইজন সদস্যের মধ্যে একজন সদস্যকে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হইতে হইবে।

আরও শর্ত থাকে যে, তফসিলের প্রথম ও দ্বিতীয় অংশে বর্ণিত ফৌজদারী ও দেওয়ানী মামলার সহিত কোন নারীর স্বার্থ জড়িত থাকিলে, সংশ্লিষ্ট পক্ষ সদস্য মনোনয়নের ক্ষেত্রে একজন নারীকে সদস্য হিসাবে মনোনয়ন প্রদান করিবেন।”।এবং

(খ) উপ-ধারা (৫)এর পরিবর্তে নিম্নরূপ উপ-ধারা (৫) প্রতিস্থাপিত হইবে, যথা:-

(৫) এই ধারার অন্যান্য বিধানে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সদস্য মনোনীত করা সম্ভব না হয়, তবে অনুরূপ সদস্য ব্যতিরেকেই গ্রাম আদালত গঠিত হইবে এবং উহা বৈধভাবে উহার কার্যক্রম চালাইতে পারিবে।”

এছাড়া গ্রাম আদালত আইন ২০০৬ এর ধারা ৬খ, ৬গ, ৭, ৮ এবং ১৫ক তেও সংশোধন করা হয়েছে।

২০২৬ সালের ১৯ নং আইন অর্থাৎ গ্রাম আদালত আইনের তপসিলের সংশোধন করা হয়েছে। সেখানে কি কি মামলা গ্রাম আদালতে করতে হবে তার বলা রয়েছে।

নিম্নাক্ত মামলা গুলো গ্রাম আদালতে করা যাবে –

-কোন চুক্তি, রশিদ বা অন্য কোন দলিল মূলে প্রাপ্য অর্থ আদায়ের মামলা।

-কোন অস্থাবর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার বা উহার মূল্য আদায়ের মামলা।

-স্থাবর সম্পত্তি বেদখল হওয়ার এক বৎসরের মধ্যে উহার দখল পুনরুদ্ধারের মামলা।

-কোন অস্থাবর সম্পত্তির জবর দখল বা ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ আদায়ের মামলা।

-গবাদি পশু অনধিকার প্রবেশের কারণে ক্ষতিপূরণের মামলা।

-কৃষি শ্রমিকদের পরিশোধ্য মজুরি ও ক্ষতিপূরণ আদায়ের মামলা।

-কোন স্ত্রী কর্তৃক তাহার বকেয়া ভরণপোষণ আদায়ের মামলা।

বি: দ্র: যখন দাবীকৃত অর্থের পরিমাণ অথবা অস্থাবর সম্পত্তির মূল্য অথবা অপরাধ সংশ্লিষ্ট স্থাবর সম্পত্তির মূল্য অথবা বকেয়া ভরণপোষণের পরিমাণ অনধিক ৩ (তিন) লক্ষ টাকা হবে তখন গ্রাম আদালতে মামলা করা যাবে।

গ্রাম আদালতের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হলেও এই আইনে বর্নিত বিধান অন্য যে কোন আইনে প্রদত্ত প্রতিকারের অতিরিক্ত হিসাবে গ্রাম আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তিযোগ্য হইবে এবং বলবৎ অন্য কোন আইনের এখতিয়ার খর্ব করিবে না।